কাউনিয়া থানা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের নাজিরদহ গ্রামের এক গৃহবধূঁর দুই সন্তানকে ৩/৪ বছর আগে প্রাইভেট পড়াতেন একই এলাকার মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া। গৃহশিক্ষক হিসেবে বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে একদিন টিনের বেড়া দেওয়া গোসল খানায় কৌশলে ওই গৃহবধূঁর গোসলের ভিডিও ও ছবি গোপনে ধারণ করেন মাজেদুল। পরে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা ভাবে প্রচার করার ভয়ভীতিসহ তার ছেলেদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করেন এবং অশ্লীল ছবি তোলেন মাজেদুল।
সর্বশেষ গত বছরের ২৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মাজেদুল আবারও বাড়িতে গিয়ে গোসলের সেই ভিডিও ও অন্যান্য অশালীন ছবি তার স্বামী সন্তানদের দেখানোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই গৃহবধূঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূঁ নিরুপায় হয়ে ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও রেহাই মেলেনি।
ঢাকায় থাকা অবস্থায় ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্কের কথা জানালে তিনি রাজি না হওয়ায় অন্য নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ১২ মার্চ সকাল দশটার দিকে তার ছোট ছেলের (১৭) ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে দেন মাজেদুল। এছাড়াও ওইদিন বেলা ৩টার দিকে বড় ছেলের (১৮) এক বন্ধুর ম্যাসেঞ্জারেও পাঠিয়ে দেন সেই আপত্তিকর ছবি। অবশেষে অসহায় ওই নারী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে গত ১১ এপ্রিল মাজেদুলকে অভিযুক্ত করে কাউনিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু বলেন, গত বছরের অক্টোবরে হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। মাজেদুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা মাজেদুলের ব্যক্তিগত চরিত্রের বিষয়। এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
মামলার তদন্তকারী অফিসার কাউনিয়া থানার এসআই সামিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পরেই অভিযুক্ত মাজেদুল গা ঢাকা দেয়। পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) স্যারের নির্দেশনায় এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ এবং রংপুর র্যাব-১৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে রংপুর মহানগরীর কেরানিপাড়া এলাকা থেকে মামলার অভিযুক্ত মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান জানান, ওই নারী গত ১১ এপ্রিল থানায় এসে মাজেদুলের বিরুদ্ধে গোপনে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ওই দিনেই অভিযোগটি নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২)(৩) ধারায় মামলাভুক্ত করা হয়।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আশরাফুল আলম পলাশ বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মাজেদুল গা ঢাকা দেয়। অবশেষে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে তাকে রংপুর মহানগরীর কেরানিপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রংপুর আদালতে সোপর্দ করেছে থানা পুলিশ।

No comments:
Post a Comment