ইতোমধ্যে এলাকা গুলো মরিচের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। এবারো মরিচের ভালো দাম পেয়ে দারুণ খুশি চাষিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কাউনিয়ার মরিচ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার দফায় দফায় চৈত্রের অকাল বৃষ্টিতে ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানায় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ৮৫ হেক্টর বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো চারশো হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে সাড়ে চারশো হেক্টর জমিতে। অধিকাংশই মরিচ ক্ষেত তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে চর নাজিরদহ, চর পল্লীমারী, চর চতুরা, প্রাণনাথ চর, বল্লভবিষু, চর সাব্দী, গোপীডাঙ্গা, চর পাঞ্জরভাঙ্গা, চর গদাই, চর ঢুষমাড়া, পূর্ব নিজপাড়া, চর গনাই, চর হয়বৎখাঁ, চর আজমখাঁ, চর রাজীবসহ তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা চরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব চরের চাষীরা আলু, ভুট্টা, রসুন, পিয়াজের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে মরিচ চাষ করেছেন। তিস্তার চরাঞ্চলে পলি ও উর্বর দো-আঁশ মাটিতে এবারো মরিচের ব্যাপক ফলন ও অধিক দাম পাওয়ায় চাষিরাও বেজায় খুশি।
ঢুষমাড়া চরের মরিচ চাষি আব্দুল করিম জানান, এ বছর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এক বিঘা জমিতে ফরিদপুরী জাতের মরিচ চাষ করেছি। প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার কারণে ফলন ভাল হয়েছে। বাজার দর কিছুটা কমলেও বৃষ্টির পর বর্তমানে প্রতি কেজি মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। একই কথা জানালেন বল্লভবিষু চরের কৃষক আব্দুল মালেক ও জগদীশ চন্দ্র।
তিস্তার জেগে ওঠা চরে মরিচ চাষাবাদ করে সাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। সেই সাথে সংসারেও ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। প্রাণনাথ চরের কৃষক কোরবান আলী জানান, তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় হাট-বাজারে চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকরা জানান, রংপুর অঞ্চলে মরিচ সংরক্ষনের জন্য সরকারি বা বে-সরকারি ভাবে কোন হিমাগার না থাকায় প্রান্তিক চাষীরা বাধ্য হয়েও কম দামে মরিচ বিক্রি করতে হয়।
উপজেলার ভায়ার হাট, খানসামা হাট, শহীদবাগ হাট, টেপামধুপুর হাট ও তকিপল হাট ঘুরে দেখা গেছে অন্য পণ্যের পাশাপাশি দেদারছে কেনাবেচা হচ্ছে মরিচ। মরিচ কেনাবেচার সাথে সম্পৃক্ত আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, ক্ষেত থেকে মরিচ ফরিয়া এবং আড়ৎদারের হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ফলে উৎপাদনকারী কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য মূল্য থেকে আবার অতিরিক্ত হাত বদলের কারণে ক্রেতা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন সাথী জানান, অনুকুল আবহাওয়ায় পরিশোধীত বীজ, প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক পাওয়ায় চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিস্তার জেগে ওঠা চরের জমিতে প্রচুর পলি পড়ায় এলাকার মাটির প্রকৃতি ও আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
তিনি বলেন, এলাকায় স্থানীয় জাতের মরিচের চাষাবাদ বেশি হয়েছে। আকারে ছোট এবং ঝাল বেশি হওয়ায় এ মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মরিচের গাছ রোপণ করা হয়। ১২০ থেকে ১৪৫ দিন সময়ের মধ্যে ৩ থেকে ৪ বার মরিচের ফলন পাওয়া যায়।
-এমআর

No comments:
Post a Comment