Thursday, June 1, 2023

কাউনিয়ায় সার্কাসে অশ্লিল গানবাজনা, শঙ্কায় কোমলমতী শিক্ষার্থীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক 
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয় পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মাঠে চলছে দি গ্রেড সোনার বাংলা সার্কাস প্রদর্শনী। এতে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এলাকাবাসী শিক্ষকরা জানায় জুন বৃহস্পতিবার থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মধ্য-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে, সার্কাস চলার কারণে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ নষ্ট হবে।

উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় সুত্র জানায়, বিনোদনের জন্য হারাগাছ ইউনিয়নের পল্লীমারী বাজারের পাশে দি গ্রেট সোনার বাংলা সার্কসের প্রদর্শনীর অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসক। ওই এলাকার পল্লীমারী জীবনগড়ি সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি সার্কাসের আয়োজক জাহাঙ্গীরকে সার্কসের প্রদর্শনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৬ মে থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী সার্কাস প্রদর্শনী চলবে।

তবে রাত ৮টার মধ্যে সার্কসের প্রদর্শনী সমাপ্ত করতে হবে। এছাড়া সার্কাসে অশ্লিল নৃত্য, জুয়া, লটারী, বাজি, মাদকদ্রব্য বেচাবিক্রি সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ এবং আইন সমাজ বিরোধী কর্মকান্ড করা যাবে না। শর্তের ব্যহত হলে সার্কসের প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে।

সরজমিনে পল্লীমারী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মাঠজুড়ে সার্কাসের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন শর্তে প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরার কথা বলা হলেও প্যান্ডেলে একটি সিসি ক্যামেরা নেই। প্রতিদিন বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা রাত ৯টায় সার্কাস প্রদর্শনী চলছে। আগামী জুন পর্যন্ত মেলা চলবে। বিশেষ করে রাতের প্রদর্শনীতে যুবকদের পাশাপাশি শিশুদের দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরে ক্লাস ছেড়ে সার্কস প্যান্ডেলে যাচ্ছে।

কথা হয় একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে তারা বলেন, এখানে সার্কাস এসেছে, দেখার জন্য প্যান্ডেলে যাচ্ছি। পল্লীমারী গ্রামের বাসিন্দা আবুজার মিয়া বলেন, সার্কাসে জুয়া না চললেও গান বাজানা হয়। বাদ্যযন্ত্রের শব্দ অনেক দুর পর্যন্ত শুনা যায়। এছাড়া রাতে এই এলাকায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা কৃষক রহিম মিয়া বলেন, ‘হামরা কৃষক মানুষ। সারাদিন রোদের মধ্যে পরিশ্রম করে মাইকের বাদ্যযন্ত্রের শব্দে রাইতত ঘুম ধরে না। ছোট ছাওয়ারা ঘুম থাকি কান্দি উঠে।’

পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, রাতের বেলায় সার্কাস চলার কারণে আমাদের পড়াশুনায় সমস্যা হচ্ছে। সামনে পরীক্ষা আমরা ঠিকভাবে পড়াশুনা করতে পারছি না। নাম না বলার শর্তে একতা পল্লীমারী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রচন্ড গরমে যারা সার্কাস এনেছে তারা এলাকার প্রভাবশালী। তাদের ভয়ে কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশের মতো উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে মধ্যবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হবে। এখানে দুই মাধ্যমিক দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে সার্কাস শুরু হওয়ায় ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল হবে না।

একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা বাড়ীতে সন্ধার পর লেখাপড়া করে। রাতে সার্কাস প্রদর্শনীর কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ থাকবে না। তারা সার্কাস দেখতে যাবে। এতে করে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত হচ্ছে। সামনে পরীক্ষায় তারা রেজাল্ট ভালো করতে পারবে না।

উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার এএসএম আরিফ মাহফুজ বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে সার্কাস শুরু হয়েছে তিনি জানেন না। এই মাত্র শুনলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাকে জানান নাই। আয়োজনকরা কিভাবে অনুমতি পেয়েছে তারাই বলতে পারবে।

বিষয়ে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাতে সার্কাসের আয়োজকদের কঠোর ভাবে বলা হয়েছে আজ (বুধবার) থেকে রাত ৮টার মধ্যে সার্কাস প্রদর্শনী সমাপ্ত করতে হবে। যদি না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা) মনোনীতা দাস বলেন, কিছু সমস্যা আমি জানতে পেরেছি। কাউনিয়া থানার ওসিকে সার্বিক বিষয় দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমআর

 

No comments:

Post a Comment