নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সুত্র জানা গেছে, উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নে ২০০১ সালে পুর্ব নাজিরদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি ঘোষনা হয়। ২০২২ সালে নতুন পাকা দ্বি-তল ভবন নির্মাণ করা হয়। নতুন ভবনের পাশে একটি পুরানো ঘর ছিল।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পুর্ব নাজিরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের আগে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য আধাপাকা টিন সেডের ক্লাসরুম তৈরি করা হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ায় টিনের তৈরি ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল রাজ্জাক লাল গোপনে ও সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে স্কুলের আধাপাকা ঘর ও বেশ কিছু গাছ বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক নিজেকে বাঁচাতে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে আতাৎকরে বিষয়টি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্ঠা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, স্কুলের পুরোনো ঢেউটিন দিয়ে আধাপাকা ঘর প্রধান শিক্ষক বিক্রি করেছেন। এছাড়া স্কুল মাঠে ফলজ ও বনজ বেশ কিছু গাছ ছিল। সেগুলোও বিক্রি করা হয়েছে। কোনো টেন্ডার ও ওঅ্যাকশন ছাড়াই প্রধান শিক্ষক তিনি ঘর ও গাছ গুলো বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নজির হোসেন জানান, তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দিয়েছেন। স্কুলে একটি টিনের ঘর ছিল। স্থানীয় একব্যক্তি ঘরের টিন ও ইট খুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারলাম প্রধান শিক্ষক গোপনে সরকারি ঘরটি বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাকে বা এলাকাবাসীকে কিছুই জানানো হয় নাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের, জহুরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, আমরা এলাকাবাসী এখানকার শিশুদের লেখাপড়ার স্বার্থে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নতুন ভবন নির্মাণ হওয়ার পর পুরানো আধাপাকা টিনের ঘরটি টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা ছিল প্রধান শিক্ষকের। পরে আমরা জানতে পারলাম গোপনে স্কুলের ঘর ও গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তাই সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য পুর্ব নাজিরদহ গ্রামের বাসিন্দারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। আমরা স্কুলের অভিভাবক হিসেবে স্কুলের মুল্যবান মালামাল বিক্রি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে বিচারের দাবি করছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল রাজ্জাক লালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এটি একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। তিনি কোনো অনিয়ম করেন নাই। স্কুলের পুরোনো টিনের ঘরটি তিনি বিক্রি করেন নাই। আগের কমিটির সাবেক সভাপতি ঘর বিক্রি করে টাকা স্কুলের জমি কেনার জন্য আমাকে দিয়েছেন। সেই জমির ওপর ওয়াসব্লক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিষয়টি তৎকালীন শিক্ষা অফিসারও জানেন। তবে সরকারি স্কুলের ঘর টেন্ডার ও ওঅ্যাকশনে বিক্রি করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তবে স্কুলের এসএমসি’র সাবেক সভাপতি মো. মেনাজ উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক তার (আমার) উপর মিথ্যা দায় চাপাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক তাকে জানিয়েছিল নতুন ভবনে লোহার গ্রীল লাগানোর জন্য পুরানো ঘরটি বিক্রি করা দরকার। তিনি স্কুলের স্বার্থে টেন্ডারের মাধ্যমে ঘরটি বিক্রি করা হউক এটি বলেছিলেন। এরপর ঘর ও স্কুল মাঠের গাছ কিভাবে বিক্রি করেছেন প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সম্পতি রেজুলেশন খাতায় তার স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক এসেছিল। তিনি কোন স্বাক্ষর করেন নাই।
অন্যদিকে এসএমসি’র বর্তমান সভাপতি মো. আব্দুল হাই জানান, সম্প্রতি তাকে স্কুলের সভাপতি করা হয়েছে। এখনো প্রথম সভা হয়নি। এছাড়া স্কুলের কি কি মালামাল আছে তাও তিনি জানেন না। তবে শুনেছেন স্কুলের একটি পুরানো ঘর বিক্রি করে জমি কেনা হয়েছে। সেই জমি এখনো রেজিষ্টারী হয় নাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিদুল হক জানান, স্থানীয় এলাকাবাসীর এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শায়লা জেসমিন সাঈদ জানান, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি গেজেট ঘোষনার পর স্কুলের জমি, ভবন ও মালামাল সবকিছুর মালিক সরকার। সেখানে পরিত্যক্ত ঘর বা অন্যকোন মালামাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করা যাবে না। যদি কোন শিক্ষক গোপনে স্কুলের মালামাল বিক্রি করে তদন্তে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment