Sunday, August 25, 2024

কাউনিয়ার বিভিন্ন জলাশয়ে দেশীয় মাছের আকাল


নিজস্ব প্রতিবেদক 
গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এই তিনে মিলে ছিল বাঙ্গালীর গ্রামীন ঐতিহ্য। কিন্তু কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব ঐতিহ্য। উত্তরের জেলা রংপুরের তিস্তা, ধরলা, মানাস, বুড়াল ঘাঘট নদী অধ্যাষিত এলাকা ছাড়াও রয়েছে কাউনিয়ার তফশিডাঙ্গা, হোকোডাঙ্গা, নেপটিডাঙ্গা,টেপরিকুড়া বিল, ধুমনদীসহ বিভিন্ন জলাশয়।

এতো গুলো নদী-নালা, খাল-বিল থাকার পরও রংপুরের কাউনিয়ায় আশানুরূপ দেশীয় মাছ মিলছে না। মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে আগে বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত চলতি মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম এখন আকাশচুম্বী।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানাগেছে, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, চায়না রিং কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, অপরিমিত কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় দুষণ, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব ডিম ছাড়ার আগেই ধরে ফেলা, ডোবা নালা ছেকে মাছ ধরা, নদী নালায় বানা দিয়ে মাছ ধরা, বিদেশী আগ্রাসী রাক্ষুসে মাছের চাষ প্রজননে ব্যঘাত এবং ধাপে ধাপে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে কাউনিয়ায় অসংখ্য ডোবা-নালা থাকার পরও নানা প্রজাতির দেশী মাছ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।

অস্তিত্ব সংকটে মাছ গুলোর মধ্যে রয়েছে ভেদা, পুটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চেলা, কর্তি, চাপিলা, কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, শাল, চোপরা, শৌল, বোয়াল, আইর, বুড়াল, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, চিতল, গতা, পয়া, বালিয়া, উপর চউকা, কাকিলাসহ অন্তত ৪১ প্রজাতির মাছ। গ্রামাঞ্চলের হাট বাজার গুলোতে এসব মাছ আগের মতো চোখে আর পরে না। হাট বাজার গুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে।

একসময় এই অঞ্চলের মানুষ ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বানিয়ে ঝাঁকি বা মুঠো জাল, চাই বড়শি দিয়ে প্রচুর পরিমানে দেশী মাছ ধরতো। নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বাজারে বিক্রয় করে তাদের সংসার চালাতো। এখন সময়ের পরিবর্তনে জনসচেতনতা আর সরকারি নজরদারীর অভাবে এসব মাছ আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে নদী নালা খাল বিলে পানি না থাকায় এসব প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পাচ্ছে না। ফলে মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত কাউনিয়ায় দেশীয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে!

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার সুমি জানান, উপজেলায় মাছের চাহিদা ৫৯২৭.৭৪ মেঃটন, উৎপাদন হয় ৫৪২৮ মেঃটন, ঘাটতি রয়েছে ৪৯৯.৭৪ মেঃটন। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ না ধরে প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বিদেশি কিছু মাছ স্বল্প সময়ে বৃদ্ধি লাভজনক হওয়ায় অনেক মৎস্য চাষী এদিকে ঝুঁকে পড়েছে।

তিনি বলেন, কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, কারেন্ট রিং জালের ছড়াছড়ি এবং মা মাছের অভয়াশ্রম গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারি জলাশয় গুলোতে ৯০ হাজার টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হবে। এলাকার মানুষ সচেতন হলে আবারও দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এমআর

No comments:

Post a Comment